সোহরাব ইফরানের ৫টি কবিতা
ঘোড়াটি শুধু আড়াই গর্জায়
মৃত বলে কোন ছদ্মনাম নেই
দাবার ঘরে বসা যায়
এমন সব পুরুষ—ঘোড়া—কিস্তি
অর্বাচীন হতে ভালবাসে তোমার আঙুলের পাশে
এ মেদুর সভ্যতা—দাবাঘরে কোন রাণী থাকে না
আঙুল থেকে নেমে আসে যুদ্ধগুলো
সরে পড়তে হয়
দাঁড়াতে হয়
সরে পড়তে হয়
দাঁড়াতে হয়
রক্ত নেই ধোঁয়া নেই শব্দ নেই
সাদাকালো একটি রণক্ষেত্র
বৃক্ষদের আত্মহত্যা প্রবণতা নিয়ে
ডাকনামে ডাকো অথচ শুনতে পাই না—বহুদিন বধির যেন এই পলি; ঢেউগুলো এখানে এসে শুকিয়ে যায়—প্রবাহ থেমে গেলে কেউ আর দেখে না—শুধু হেঁটে আসে পিঁপড়ে আর পিঁপড়ে; বাঁক বদল করতে করতে নরসুন্ধা গিলে নিয়েছে—ভ্রান্তি—নিরাময়হীনতা—জরায়ু; এদিকে সব পুরুষকেই শুকিয়ে যেতে দখি—নেমে পড়ি পচনশীল সব বিলাসিতায়
জমতে থাকে—জলমৃত্যু—দাগ—আপন আপন ক্ষেতের বিবরণ; সবুজ মিনার থেকে উড়ে আসা ডাকের আলাদা কোনো তরঙ্গ নেই; কীটেরা যাই খুঁজে ফেরে তুমি জেনো তার বিষাক্ত হবার প্রবণতা
ভৈরব বাজার জং
কোন মানুষ যখন রেললাইন থেকে আরো আর দূরে যেতে পারেনা, তখন সে হৃদপিন্ড রগড়ায়। হা করে বলে ফেলে, পিপাসা তার। বলে স্তব্ধতা আমিই বয়ে নিয়ে যাই, অবমুক্ত করি ক্রসিং ব্লক। তোমার তেলকল থেকে হুইসেল শুনে আমিই কয়লাগুলো উস্কে দেই রোজ। হাড়ের সোয়ারী নিয়ে সে লাল টাউনে তুমি কখনো ঘরে যাওনা, আমিও উঠোন খুঁজিনা। ট্রেনের অনেক জানলা একসাথে বয়ে যেতে দেখে, একদিন নিজেদের ষ্টেশন ছেড়ে যাই। জানালা দেখাই…
পা’গুলো সাঁতারের উপযোগী নয়
আয়নার গভীরে যে উদ্ভিদ বিস্তার করছে বুকের হাড়
কখন তা ভেসে গেছে নীল লবণের মজ্জায়
ফেনা জলের স্বরে ডেকে
দূর বিন্দু থেকে ক্লান্ত সাঁতার ভেসে আসে
আলোর ঝলকানিতে জেলেনৌকার অলস গুলুই শূন্যে ডুবে যায়
প্রতিফলনের মৌসুম এখন
সমুদ্রের পাড়ে থাকি
কাঁকড়ার সাঁতার ঘেসে বালুকায় উঠে এসো
আলোর মাত্রাগুলো সংকেত বয়ে আনে
সাঁতারের রেখা ভেঙে
ডুবে যায় নাবিক
বাতাসে বালির দেহ
মাস্তুলকে ঘিরে আজো গুনটানে হাড়ের অস্তিত্ব
ফেনাজলের মতো দেখেছিলাম কাঁচবালি জেগে থাকে
বৃথাসংকেত জেলেদের জলহীনতা ঘিরে
কাঁচি
মাস শেষে যার ধারের প্রয়োজন হয়, শান শেষে মানুষের বৈশিষ্ট্য তার সামান্যই মনে থাকে। কাঁচি বহন করে মানুষই তার অতিরিক্ত সুতো, রিক্ত ব্যাণ্ডেজ, যে কোন নতুন সম্ভাবনা উদ্বোধনে বিস্ময় আনতে লাল ফিতা কাটে তাকে দিয়েই। আর সব যন্ত্রের মতো মানুষের বৈশিষ্ট্যের আদলে আমি দেখি তার আঙুল জীবিত হয়ে আছে। চৌচির গৌরবে পৃথিবী হয়ে যাচ্ছে ধারালো, মানুষ জানেনা প্রতিদিন কাঁচির মতোই শুধুই করছে তারা ধারের জীবন, দাঁতের কাছে, হাতের কাছে, বুকের সে কেটে ফেলছে কত কি। প্রতিটি নখের ভেতর কেটে ফেলার ইচ্ছা জাগে, তা চলমান, কাঁচি থেকে চোখ শিখে নিচ্ছে, শান দাও, আরও শান শিখে, কেটে ফেল যেভাবে যেমন পার। যত না প্রয়োজনে, তার চেয়ে হিংস্র ভাবে ধার দেয়ার জন্যেই মানুষ কাঁচি কে চায়। পাথরে ঘষে কাঁচিকেই পার তুমি ক্ষয়ে যাওয়ার শব্দ আর ফুলকি দিয়ে নিজের দিনলিপি মনে রাখতে। বসনে যখন বিলাসিতা রাখবে না ভেবে তুমি বৈরাগী হয়ে উঠছো, কাঁচিই আসে শেষবার তোমার বসন মাপ মতো কেটে দিতে। তখন একবার মানুষ কাঁচিকে নিবিড় ভাবে অনুভব করে।